অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি ও সুযোগ সুবিধা
অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিষিয়ে পড়ার সুযোগ আছে, আছে নানা ধরনের বৃত্তি। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী।
সেখানে পড়ালেখার সুযোগ বা চ্যালেঞ্জগুলো কী? অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি গ্রহনে সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আপনার সাধারণ ১০ টি প্রশ্নের উত্তর মিলবে এখানে।
১. স্নাতক কোর্সের জন্য কি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা যায়?
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের জন্য আবেদন করা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকের সুযোগ আছে, তবে সব বিষয়ে পড়ার সুযোগ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তির সব তথ্য পাওয়া যাবে। উচ্চমাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ নম্বর, আইইএলটিএস স্কোর অন্তত ৬.৫ নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
২. বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ কেমন আছে?
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বৃত্তির নানা সুযোগ আছে। মাস্টার্স ও পিএইচডিতে বৃত্তির সুযোগ আছে অনেক। স্নাতক ও মাস্টার্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফির ওপর ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়া যায়।
ভর্তি ও বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর ও প্রাতিষ্ঠানিক ফল বিশেষ গুরুত্ব পায়। স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস দেয় সে দেশের সরকার। এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থী আসা-যাওয়ার বিমানভাড়া, পড়াশোনার যাবতীয় খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচসহ গবেষণা এবং বইপত্রের জন্য অর্থ পান।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক তহবিল দেয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপসহ বিভিন্ন সরকারি বৃত্তির মাধ্যমেও পড়ার সুযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় উচ্চতর শিক্ষায় ফেলোশিপ দেওয়ার জন্য আবেদন আহ্বান করে।
বিস্তারিত: pmfellowship.pmo.gov.bd
৩. সরকারি বৃত্তি পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন হয়ে থাকে?
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসের জন্য কাজের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রার্থীর সম্ভাব্য ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজের অভিজ্ঞতায় কিছুটা রকমফের হচ্ছে।
প্রতিবছর অনলাইনে এই বৃত্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে australiaawardsbangladesh.org ওয়েবসাইট থেকে। আইইএলটিএস স্কোরসহ সিভি, নিজের পড়াশোনা ও গবেষণার পরিকল্পনা ও সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে আবেদনের সময়।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
৪. অস্ট্রেলিয়ায় আর কী কী বৃত্তি আছে?
বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বেশি। আরটিপির বৃত্তি পেতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অ্যাকাডেমিক সিজিপিএ, গবেষণার অভিজ্ঞতা ও জার্নাল পেপার, আইইএলটিএস স্কোর, কাজের অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পায়।
এছাড়া আবেদন করার সময় স্টেটমেন্ট অব পারপাস, নিজের সম্পর্কে লেখা ও আবেদনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর যত ভালোভাবে লেখা যাবে, ততই বাড়বে বৃত্তি ও ভর্তির সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব তহবিল পেতেও এসব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ফুল ফান্ডসহ ভর্তির সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইল করে এসব বৃত্তির খোঁজ নেওয়া যাবে।
৫. বৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস স্কোর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর অন্তত ৬.৫ প্রয়োজন।
আইইএলটিএসের ব্যান্ড স্কোর ৬.৫ থেকে ৭ থাকলে বৃত্তি ও ভর্তির সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার সবাই ইংরেজিতে কথা বলে, যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
৬. অস্ট্রেলিয়ার ভার্সিটিতে জীবনযাত্রার মান ও ব্যয় কেমন?
যাঁরা বিদেশে পড়তে চান, তাঁদের জন্য অস্ট্রেলিয়া দারুণ এক গন্তব্য। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসাসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা অনেক ভালো। বৈষম্যহীন পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। জোবায়ের হোসাইনের মতে, অস্ট্রেলিয়া উন্নত জীবন ও পড়াশোনার নিশ্চয়তা দেয়।
সর্বশেষ টাইমস হায়ার এডুকেশন ও কিউএস র্যাঙ্কিং অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ এক শর মধ্যে আছে।
উচ্চতর পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পরই তৃতীয় জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, ইউরোপের অনেক দেশের শিক্ষার্থীর কাছেও অস্ট্রেলিয়া জনপ্রিয়।
তবে জীবনযাত্রার মান অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতোই ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বাসাভাড়া আর নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় কম বলা যাবে না কোনোভাবেই।
নিজ খরচে পড়তে এলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হবে। উল্টো দিকে, বৃত্তিসহ পড়তে এলে আপনার তেমন কষ্ট হবে না। অস্ট্রেলিয়ায় সব নাগরিক সুবিধা হাতের কাছেই পাবেন। জীবনযাপন সহজ, সুন্দর ও সাবলীল।
৭. বৃত্তি ছাড়া নিজ ব্যয় বহন করে পড়তে চাইলে খরচ কেমন?
বৃত্তি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে। ব্যাচেলর পর্যায়ে বছরে ১৫ হাজার ডলার থেকে ৩০ হাজার ডলারের মতো খরচ পড়বে।
মাস্টার্স পর্যায়ে বছরে ২০ হাজার ডলার থেকে ৩৭ হাজার ডলার। এ ছাড়া পিএইচডি পর্যায়ে খরচ ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ডলারে মতো।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
৮. পড়াশোনার মান ও পরিবেশ কেমন?
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রমও গবেষণাকেন্দ্রিক। শুধু পিএইচডি নয়, মাস্টার্সেও শিক্ষার্থীদের গবেষণাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকে। এ কারণে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক—দুই বিষয়েই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ার পড়াশোনার মান নিঃসন্দেহে উন্নত। সবার জন্য শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ এখানে অনেক বেশি। নারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিসহ পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখস্থ বা বইনির্ভর পড়ার চেয়ে আলোচনা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। অস্ট্রেলিয়ার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বার্ষিক বা সেমিস্টার সমাপনী পরীক্ষা হয় না। নানা অ্যাসাইনমেন্ট আর ক্লাসওয়ার্কের মাধ্যমে মেধা যাচাই করা হয়।
৯. পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ আছে কি?
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজের সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান।
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশি লাইসেন্স দিয়ে শিক্ষার্থী অবস্থায়ই এখানে গাড়ি চালানো যায়। ঘণ্টায় গড়ে ২২-২৮ ডলার আয় করা সম্ভব।
এ ছাড়া সুপারশপ, পেট্রলপাম্প, রেস্তোরাঁসহ নানা প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ আছে। সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের সুযোগ রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
১০. পড়ালেখা করে চাকরির সুযোগ কেমন?
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ, কোন বিষয়ে পড়ছেন বা কী গবেষণা করছেন, তার ওপর নির্ভর করে। ভালো ফল ও গবেষণায় যুক্ত থাকলে চাকরির সুযোগ-সম্ভাবনা বাড়ে।
বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন রকমের কাজের সুযোগ। পিএইচডি গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা, পিএইচডি শেষ করার পর, বিশেষত আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণার ক্ষেত্রে যাঁরা অবদান রাখছেন, তাঁদের জন্য গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম নামের একটা সুযোগ আছে। তবে বেতনকাঠামো যুক্তরাজ্যের চেয়ে অনেক ভালো।
বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group