এইচএসসি অর্থনীতি ২য় পত্র ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১. এইচএসসি অর্থনীতি ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
পঞ্চম সপ্তাহের অর্থনীতি ২য় পত্র সমাধান
ক. কৃষি ও পরিবেশ (Nature and Agriculture)
বৈচিত্র্যময় ভৌগােলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ একটি উন্নয়নশীল দেশের মতােই বাংলাদেশেও পরিবেশগত উন্নয়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেহেতু অর্থনৈতিক কার্যাবলি এখনও কৃষিসহ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল, সেহেতু কৃষিসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরসমূহের জিডিপি-তে অবদান টেকসই ও উন্নত পরিবেশ (quality of environment) দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত হয়।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ পরম্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হওয়ায় পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে সমন্বিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। আমাদেরকে পরিবেশ দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়সমূহ কী, কীভাবে এগুলাে সংঘটিত হচ্ছে এর প্রভাব এবং প্রতিকারের উপায় নিয়ে চিন্তা করা প্রয়ােজন। নিম্নে প্রবাহ চিত্রের সাহায্যে ধারণাটি প্রদান করা হলাে:
প্রবাহ চিত্র হতে বােঝা যায়, মানুষই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। বনভূমি ধ্বংস, কার্বন নির্গমন, CFC গ্যাস নির্গমন, পরিবেশের প্রতি হুমকিস্বরূপ প্লাস্টিক ও পলিথিন সামগ্রী ব্যবহার, বিষের মিশ্রণ, শব্দ দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, মারণাস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবহার ইত্যাদির ফলে মানুষ নিজেই পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সৌর তেজস্ক্রিয়তার দ্বারা উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বিরূপ প্রভাব হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।
এইচএসসি অর্থনীতি ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
গত ১০০ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার। সমুদ্র উপকূল এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল প্রভাবগুলাের কারণে বাংলাদেশ নাজুক পরিস্থিতির শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলাের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সর্বশেষ তিন বছরের প্রতিবেদনে ২০০ টি দেশের মধ্যে যষ্ঠ অবস্থানেই রয়ে গেছে।
১৯ বছর ধরে দুর্যোগের সংখ্যা, মৃত্যু, ক্ষয়ক্ষতির মােট হিসেবের ভিত্তিতে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনটি জার্মান ওয়াচ প্রকাশ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঝুঁকিসমূহ ও বিপন্নতা অভিযােজন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ব্যাপারে সমীক্ষা ও মূল্যায়নের ফলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বাংলাদেশ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলাের অন্যতম।
বাংলাদেশে দরিদ্র জনগােষ্ঠীর নাজুক অর্থনীতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিক নির্ভরশীলতা এ বিপন্নতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্যা, খরা, সাইক্লোন, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) এর মতে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
এইচএসসি অর্থনীতি ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, বন্যা, সাইক্লোন, খরাসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চল, দ্বীপদেশসমূহ পানিতে তলিয়ে যাবে, উদ্বাস্তু সমস্যা, খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে।
খ. বাংলাদেশের কৃষিতে পরিবেশ দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে নিম্নোক্ত সমস্যার উদ্ভব হবে।
১. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বিশেষজ্ঞদের মতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গত ১০০ বছরে ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এ শতকেই বঙ্গোপসাগরের পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১ মিটার বৃদ্ধি পাবে বলে গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের নিচু ও উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাবে।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক উষতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রায় অতি বৃষ্টি, বন্যা, সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছাস, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে আছে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. উৎপাদন হ্রাস পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে শস্য, প্রাণিজ, বনজ ও মৎস্য সম্পদ প্রভৃতি উপখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এইচএসসি অর্থনীতি পঞ্চম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর
৪. লবণাক্ততার হার বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে স্থলভাগে লবণাক্ততার হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ইতােমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল হতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দিকে প্রায় ১০০ কিলােমিটার অভ্যন্তরে সমুদ্রের লােনা পানি প্রবেশ করে লবণাক্ততার হার বৃদ্ধি করছে ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
৫. কৃষিভূমি হ্রাস: সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে, তখন আবাদযােগ্য কৃষিভূমিহাস পাবে।
৬. খাবার পানির সংকট: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার হার বৃদ্ধি এবং উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ -এর ফলে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হবে।
৭. চাষাবাদ ব্যাহত: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে খরার কারণে জমি চাষাবাদ করা যাবে না।
৮. খাদ্য সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জনবহুল বাংলাদেশে উৎপাদন হ্রাসের ফলে খাদ্য সংকট চরম আকার খাশ করবে।
৯. নদীর প্রবাহ পরিবর্তন: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পর্বতের বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের নদী, উপনদীগুলাের প্রবাহ পরিবর্তিত হচ্ছে। অনেক নদী নাব্যতা হারাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে।
এইচএসসি অর্থনীতি ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
১০. অজানা রােগের প্রকোপ বৃদ্ধি: জমিতে কীটনাশক প্রয়ােগ, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, তেজস্ক্রিয়তা, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বহুবিধ কারণে মানুষসহ প্রাণিকুলে নতুন অজানা রােগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১১. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইকোসিস্টেম তথা সামগ্রিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে উদি ও প্রাণিকুল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।
গ.বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থাদি
ক. পারমাণবিক কৃষি প্রযুক্তি
FAO এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বীকৃত খাদ্য ও কৃষিখাতে যেমন – প্রকৃতি, মাটি, শাক সবজি, প্রাণী, বায়ু এমনকি খাদ্যসামগ্রীতে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ (radioisotopes) ব্যবহারের মাধ্যমে পরিমাণগত, গুণগত বা রূপগত পরিবর্তন সাধনকে পারমাণবিক কৃষি প্রযুক্তি বলে। গত তিন দশকে বাংলাদেশের কৃষিখাতে পারমাণবিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার উন্নত দেশের মতাে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারমাণবিক কৃষি প্রযুক্তির গুরুত্ব বা উল্লেখযােগ্য ব্যবহারসমূহ হলাে:
i) Gamma – radiation উদ্ভিদ ও প্রাণীর রােগ – জীবাণু নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী ও রােগের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির নিউক্লিয়ার মেডিসিন রয়েছে।
ii) তেজস্ক্রিয় পরমাণু ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন পদ্ধতিতে অনেক বিক্রিয়ার কৌশল নির্ণয় করা যায়। যেমন, তেজস্ক্রিয় পরমাণু ব্যবহারের দ্বারা সালােকসংশ্লেষণের মাধ্যমে গ্লুকোজ প্রস্তুতির কৌশলটি জানা যায়।
এইচএসসি অর্থনীতি ২য় পত্র ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট
iii) রেডিও আইসােটাপ- এর সাহায্যে উন্নতমানের শস্যবীজ সংরক্ষণ করা যায় এবং শস্যবীজের স্থায়িত্বও বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণত শস্যবীজের গুণগত মান এক বছর সঠিক থাকলেও রেডিও আইসােটোপ- এর সাহায্যে এর স্থায়িত্ব পাঁচ বছর বা দশ বছর অর্থাৎ দীর্ঘস্থায়ী করা যায়।
iv) Radiation এর মাধ্যমে শস্য বীজের গুণগত মানের পরিবর্তন করে উৎপাদনও বৃদ্ধি করা যায়। যেমন: লবণাক্ততা প্রতিরােধী শস্য বীজ উদ্ভাবন, উফশী বীজ উদ্ভাবনে তেজস্ক্রিয় আইসােটোপ ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে গামারশ্মি প্রয়ােগে উচ্চ প্রােটিনযুক্ত নতুন জাতের ছােলা ফরিদপুর -১, নতুন জাতের পাট এটম-34 এবং ইরাটম-24 ও বিনাশাইল নামক নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে।
v) মাটি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, গুণগত মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেয়ার জন্য , চাষাবাদের ক্ষেত্রে কম পানির ব্যবহারে পরমাণু কৃষি প্রযুক্তি ভূমিকা পালন করে।
vi) কঠিন শিল্পকে রেডিও আইসােটোপ- এর সাহায্যে বিশেষ প্রক্রিয়া সারে রূপান্তরিত করে ব্যবহার করা যায়.
খ. বায়ােটেকনােলজি পদ্ধতি
Biotechnology বা জৈব প্রযুক্তি হলাে এরূপ একটি বিষয় যা কোনাে ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে জীব কোষের কোনাে উপাদান, কাঠামােকে পরিমিত পরিবর্তন (modify) এর মাধ্যমে একটি নতুন সৃষ্টিকে নির্দেশ করে।
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি এসাইনমেন্ট
Bios শব্দের অর্থ জীবন এবং Technology শব্দের অর্থ প্রযুক্তি। কোনাে জীবকে মানবকল্যাণে প্রয়ােগের যে কোনাে প্রযুক্তিকে বলা হয় বায়ােটেকনােলজি বা জৈবপ্রযুক্তি। ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী কাল এরেকি ( Kerl Ereky ) Biotechnology শব্দের প্রবর্তন করেন। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া হতে শুরু করে উদ্ভিদ, প্রাণী, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, কৃষি, শিল্প সর্বক্ষেত্রেই প্রযােজ্য হয়।
আধুনিক কৃষি জৈব প্রযুক্তি সম্পর্কে বলা যায়, Modern agricultural biotechnology includes a range of tools that scientists employ to understand and manipulate the genetic makeup of organisms for use in the production of processing of agricultural products.
উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোষে থাকে জিন (Gene) যা বংশগতির একক জৈব প্রযুক্তির (Biotechnology) গুরুত্ব সম্পদ সীমিত কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার ভারে আক্রান্ত দেশসমূহে জৈব প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
যেমন:
i) বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন শেসমূহে নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন, উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রভৃতির ফলে উক্ত দেশসমূহে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, একারণে সৃষ্টি হয় খাদ্য সংকট। বন্যা, খরা প্রভৃতি প্রতিকূল আবহাওয়া প্রতিরােধী শস্য উৎপাদন , খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জৈব প্রযুক্তির গুরুত্ব রয়েছে।
ii) উচ্চ ফলনশীল বীজ উদ্ভাবনে এর গুরুত্ব যথেষ্ট। প্রতিটি চাষের মাধ্যমে ৩০-৪০ % ফলন অধিক বাড়ানাে যায়। Hira, Aloron, Jagoron, Sonar Bangla, ময়না প্রভৃতি উচ্চ ফলনশীল ধান এর উদাহরণ।
iii) অণুজীববিজ্ঞানীরা মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিল্প ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে; মাছের পােনার কৃত্রিম প্রজননে, অধিক ও দ্রুত উৎপাদনের লক্ষ্যে জিন প্রতিস্থাপনে, পানিকে আর্সেনিকমুক্তকরণে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
iv) লবণাক্ত সহিষ্ণু ধান, শীত সহিষ্ণু পাট উদ্ভাবন জৈব প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত এলাকা চাষের আওতায় আসবে এবং শীতকালেও পাট উৎপাদন করা যাবে যার ফলে কাগজ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের কাঁচামালের অভাব দূর হবে।
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি ২য় পত্র এসাইনমেন্ট
v) সােনালী ধান থেকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বাদ দিয়ে p-carotene সমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে (Genetically Modified Crops) এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
vi ) বায়ােফার্মিং ( Biopharming ) শস্য উৎপাদন করা যায়। এরূপ শস্য প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ ছাড়াও সংরক্ষণ করা যায়। এ শস্যের দাম কম তাই দরিদ্র দেশের জনগণ এতে উপকৃত হয়।
vii) বায়ােফুয়েল (Biofuels) তৈরিতে জৈব প্রযুক্তি সহযােগিতা করে। জীবের অবশিষ্টাংশ, বর্জ্য, মল-মূত্র, বৃক্ষ ও গুল্ম (ছােট প্রজাতির উদি) প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বায়ােফুয়েল তৈরি করা যায়। এর ফলে পরিবেশ দূষণ কম হবে বরং উষ্ণতা হ্রাস পাৰে। ফুয়েল আমদানি হাসের কারণে বৈদেশিক মজার মজদ বদ্ধি পাবে।
গ.আইসিটি (তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি)
বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার ভারে আক্রান্ত একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও এখনও খাদ্য নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছরই আবাদযােগ্য জমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে কৃষির বিভিন্ন উপখাত বা খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষির বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় তথ্য ও সেবা কৃষকের দোরগােড়ায় পৌঁছানাের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছে, তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি। তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি (Information & Communication Technology-ICT) বর্তমানে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও সেবা প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
(i) কৃষিতে সাধারণ কৃষি সমস্যা- সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধান, ফসলে রােগের আক্রমণ, কীটনাশক প্রয়ােগ, পরিবেশবান্ধব কীটনাশক (জৈব কীটনাশক) প্রভৃতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ।
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি এসাইনমেন্ট
(ii) উদ্ভাবনী কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন- নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি; উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক; সর্বোত্তম টেকসই প্রযুক্তি নির্বাচন প্রভৃতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যায়।
(iii) উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষি উপকরণ ব্যবহার বিধি যেমন- সার, কীটনাশকসহ আধুনিক কলা- কৌশলের সঠিক প্রয়ােগ জানা যায়।
(iv) শস্যের জাত ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ, নতুন জাত ও উপকরণ উদ্ভাবনের সকল তথ্য- উপাত্ত সংরক্ষণ ICT ব্যবহারের মাধ্যমেই সম্ভব।
(v) প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ICT এর সাহায্যে কৃষক লাভ করতে পারে।
(vi) মাটির গুণাগুণ, রােগবালাই ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে এটি সাহায্য করে।
(vii) কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক প্রভৃতির সাথে শক্তিশালী যােগাযােগ স্থাপিত হয়। কৃষি উন্নয়নে, জনকল্যাণমুখী সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে, মধ্যস্বত্বভােগীদের দৌরাত্ম প্রতিরােধ বা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম নির্ধারণ করে দেয়। ICT এর সাহায্যে সমগ্র দেশের কৃষক এ তথ্য দ্রুত অবগত হতে পারে। এর সাহায্যে সরাসরি ব্যবসায়ীদের সাথে কৃষকদের যােগাযােগ স্থাপিত হয় ।
ঘ. বাংলাদেশে কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গুরুত্ব
বাংলাদেশ একটি জনবহুল কৃষিপ্রধান দেশ। এখনাে ২৩.৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার। জাতীয়ভাবে ৩৫.৪ শতাংশ মানুষ এখনাে ভূমিহীন, গ্রামে এই হার ৪৭.৫ শতাংশ। জনসংখ্যায় ৪৫.১ শতাংশ মানুষের মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.০৫ একর অপেক্ষা কম।
Human Development Report 2015 অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৭ টি দেশের মধ্যে মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ তম- ২০১৪ সালে ছিল ১৪২ তম। এসব তথ্য প্রমাণ করে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেমন
এইচএসসি পঞ্চম সপ্তাহের অর্থনীতি সমাধান
১. নতুন জাতের শস্যবীজ উদ্ভাবন: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মােকাবেলায় লবণাক্ততা ও খরাপ্রবণ এলাকার জন্য অথবা বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য বিদ্যমান কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শস্যের নতুন জাত উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি।
২. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: উন্নত কৃষি উপকরণ যেমন ধান কাটার সময় কাচির পরিবর্তে হারভেস্টার ব্যবহার করলে অল্প শ্রমের সাহায্যে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হয়। একইভাবে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ব্যবহার করলে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
৩. অধিক উৎপাদন: কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একই আয়তনের জমিতে পূর্বের তুলনায় অধিক উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।
৪. দক্ষতা বৃদ্ধি: ক্রমাগতভাবে কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ও জমিতে ব্যবহারের ফলে কৃ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
৫. কর্মসংস্থান কৃষি: প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কৃষি জমিতে প্রয়ােগের মাধ্যমে বাড়তি শ্রমের প্রয়ােজন হয়। এর ফলে Founder of Scholars Educare বাংলাদেশের মতাে শ্রমবহুল দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
৬. পরনির্ভরশীলতা হ্রাস: কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়ােগের মাধ্যমে ফসল তথা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে পরনির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে।
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি এসাইনমেন্ট
৭. আয় ও জীবনযাত্রার মান: কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতিই লাভবান হয়। কৃষকদের উৎপাদন, আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে ধনিক শ্রেণির কৃষকরা অধিক লাভবান হলেও প্রান্তিককৃষকদেরও অনেক প্রাপ্তি ঘটে। এ ছাড়াও কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসার, শিল্পের কাঁচামালের যােগান, পরিপূরক শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ অবকাঠামােগত অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উন্নত বীজ উদ্ভাবন ও এর ফলাফল
মানসম্মত বীজ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান উপকরণ। অধিক হারে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও কৃষকদের নিকট সরবরাহের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে কৃষি প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত উপাদান হলাে—
- উচ্চ ফলনশীল– উন্নত বীজ
- আধুনিক সেচ সুবিধার প্রয়ােগ
- রাসায়নিক সার
- কীটনাশক এবং
- প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ও পল্লি ঋণ
উপরিউক্ত উপাদানগুলাের প্রভাবে ফসলের ধরন পরিবর্তন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও ব্যবসা – বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। তবে সমাজে এর প্রভাব শুধুইতিবাচকই নয় কিছু নেতিবাচকও রয়েছে।
যেমন ইতিবাচক প্রভাব: কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি এসাইনমেন্ট
ইতিবাচক প্রভাব:
কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ
উৎপাদন: বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে কৃষি প্রযুক্তি বিশেষ করে উন্নত বীজ উদ্ভাবন ও ব্যবহারের ফলে শস্যের বহুমুখীকরণ, নিবিড় চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ধান, গম, ভুট্টা, পাট, ডাল , সবজি প্রভৃতির ফলন পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন জিন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রবি -১ নামে উদ্ভাবিত পাটের জাত সাধারণ তােষা পাটের জাত অপেক্ষা ২০ শতাংশ বেশি ফলন দিচ্ছে, উচ্চতাও তােষা অপেক্ষা ২০ সেন্টিমিটার বেশি, আঁশের পরিমাণও ২০ শতাংশ বেশি। সাধারণ তােষা পাট ১২০ দিন পর কাটতে হয় কিন্তু রবি-১ ১০০ দিনে কাটা যাবে। ২০ দিন বেঁচে যাওয়ায় একই জমিতে আমন চাষে সুবিধা পাবে।
কর্মসংস্থান: উন্নত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে সামগ্রিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পেয়েছে, বেকারত্ব হ্রাস পেয়েছে।
সম্পদের কাম্য ব্যবহার উন্নত বীজ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন: বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মােকাবেলায় কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তার ব্যবহার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ অভিযােজনের অন্যতম উপায় হলাে কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তার ব্যবহার। যেমন ব্রি-৩৯ ও ৭১ ধান পরিবেশ ও গুলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ার ফলে, এ জাতের ধান চালে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছে।
ব্রি-৭১ এর ফলন তুলনামূলকভাবে অধিক হলেও উভয়ই পাট কাটার ১৫ দিন পূর্বে জমিতে কোনাে রকম চাষ ছাড়াই বপন করা যায়। রিলে পদ্ধতির এরূপ চাষাবাদের এ ধান অন্যান্য ধানের চেয়ে প্রায় ১০ দিন পূর্বেই কাটা যায়। ব্রি-৭১ জাতের ধানের গাছ বড় হওয়ায়। ভালাে খড়ও পাওয়া যায়।
খাদ্য নিরাপত্তা: বাংলাদেশের বিপুল জনগােষ্ঠীর বর্ধিত খাদ্য চাহিদা পূরণে তথা খাদ্য নিরাপত্তায় উন্নত বীজ উদ্ভাবনের গুরুত্ব অপরিসীম।
এইচএসসি ৫ম সপ্তাহের অর্থনীতি এসাইনমেন্ট
নেতিবাচক প্রভাব:
কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ
দেশীয় প্রজাতির শস্য: উফশী বীজ ব্যবহারের কারণে শস্যের দেশীয় প্রজাতিসমূহ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
সামাজিক বৈষম্য: সমাজে ধনী কৃষকরাই উন্নত বীজ, সার, সেচযন্ত্র, কীটনাশক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা ভােগ করে থাকে। ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষিরা তেমন লাভবান হয় না, অথচ তাদের সংখ্যাই অধিক।
মাটির উর্বরতা: কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে মাটির উর্বরতা ও গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে।
পানির স্তর: অতিরিক্ত সেচ ব্যবস্থার কারণে গভীর নলকূপ ব্যবহারের ফলে ভূ- গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
অবাঞ্ছিত রােগবালাই: উচ্চ ফলনশীল প্রযুক্তি কৃষিতে প্রয়ােগের ফলে অনেক নতুন নতুন অবাঞ্ছিত রােগবালাই এর আবির্ভাব হচ্ছে।
এইচএসসি ২০২১ অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান লিস্ট
পরীক্ষার বছর | সপ্তাহের নাম | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ১ম সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ২য় সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ৩য় সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ৪র্থ সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ, এসাইনমেন্ট সলভ, বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group