বিভীষিকাময় একটা বছর পার হয়ে গেল। শিক্ষাব্যবস্থায় এসেছে স্থবিরতা এবং একই সাথে অনেক জল্পনা কল্পনার পরে এইচএসসি ২০২০ ব্যাচকে দেওয়া হয়েছে অটোপ্রমোশন। জিপিএ ৫.০০ এর ছড়াছড়ির ভীড়ে এবার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক ময়দান।
আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ শুরু হবে। ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি যুদ্ধে এসেছে বহু পরিবর্তন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়। বরাবরের মতো এবার সমন্বিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হবে।
এ সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা নির্ঘুম রাত এবং নানা চিন্তা ভাবনায় দিন কাটাচ্ছেন। এত প্রতিযোগিতার মাঝে কোথায় ভর্তি হবে, ইচ্ছে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে তো এ নিয়ে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের জল্পনাকল্পনার শেষ আর শেষ নেই।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদেরই প্রথম ইচ্ছে থাকে মেডিকেল অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, কিন্তু এত প্রতিযোগিতা ও অপ্রতুল সিটের কারণে অনেকের ইচ্ছেটি গুড়ে বালি হয়।
তাই ভালো মন্দের হিসাবে অনেক শিক্ষণার্থী কৃষি বিষয়ক বিষয়ে পড়তে আসে। তবে এই সেক্টর নিয়ে গালমন্দ করার কোনো কারণ নেই। কারণ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং প্রতিনিয়ত কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের ও দশের উন্নতি করে যাচ্ছে এই সেক্টরের শিক্ষার্থীরা।
আর তাছাড়াও চাকরির সময়ও সহজেই ভালো চাকরি পাওয়া যায়। রয়েছে বিসিএস এ স্পেশাল কোঠা। তাই ভালো চাকরির পাবার আশা নিয়ে কোনো দুশঃচিন্তা থাকে না।
তাই কৃষিকে অবহেলা না করে প্রথম থেকেই এর প্রতি সচেতন হওয়া উচিত। এছাড়াও কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে দেখা যায় কত সহস্র শিক্ষার্থী এর পেছনে লেগেছে। দ্বিতীয় বারের মত এই বছর দেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি সংক্রান্ত ডিগ্রিগুলোর গুচ্ছ পরীক্ষা নিবে।
এখানে প্রতিযোগিতা কেমন তা পূর্বের বছর চান্স পাওয়া এবং একই সাথে চান্স না পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করলেই বুঝতে পারা যাবে। সারাদেশে একই প্রশ্নে একই সময়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা এবং যাতায়াত ভোগান্তি হবে না।
কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বমোট ৩৫৫৫ সিটের বিপরীতে মোট ৩৫৫৫০+ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ফাস্ট টাইমার, সেকেন্ড টাইমার উভয়েই এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ইংরেজিতে ১০, প্রাণিবিজ্ঞানে ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ১৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, রসায়নে ২০, গণিতে ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে।
যারা মূলত মেডিকেল প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য আলাদাভাবে গণিতে সময় দিতে হবে এবং যারা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জন্য জীববিজ্ঞান খুব ভালো করে পড়তে হবে।
কৃষিতে ক্যারিয়ারঃ
কৃষিতে লেখাপড়া করে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে চাকরি করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। বর্তমানে অনেক কৃষিবিদ বিদেশে চাকরি করছেন। সুতরাং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে হতাশার কিছু নেই। দেশ কৃষিভিত্তিক হওয়ায় নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
কাজের ক্ষেত্র: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অনুষদেও চাকরির ক্ষেত্র বেড়েছে। ভালো ফল করলে সেখানে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি।
কৃষি বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য অনেকেই কলেজে শিক্ষকতা করছেন। এরপর আসা যাক বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (বিসিএস) পরীক্ষায় কৃষিবিদেরা টেকনিক্যাল ও সাধারণ উভয় কোটায় আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। কৃষি অনুষদ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। বর্তমান সময়ে সাধারণ কোটায় বিপুলসংখ্যক কৃষিবিদ যোগ দিচ্ছেন।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড,
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই), এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মস ছাড়াও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি রয়েছে।
তন্মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা হয়, যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং খাদ্যের গুণগতমান নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পথ খুলে দেয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান: বেসরকারি পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্র বেশ ব্যাপক। বেসরকারি দুগ্ধ ও পোলট্রির খামার, ব্র্যাক, ফিড মিল, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির সুযোগ আছে। এসবের মধ্যে আড়ং ডেইরি, কাজী ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, মিল্ক ভিটা, সিপি ফুড উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক সংস্থা: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউএসএইড, ডিএফআইডি, ড্যানিডা, সিডা, উইনরক, ইরি, আইএফডিসি ও অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও কৃষিবিদদের অগ্রাধিকার রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
- ইমদাদ-সিতারা খান বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি-২০২৪ | Imdad Sitara Khan Scholarship Circular
- প্রাইমারি সিলেকশন লেটার প্রিন্ট ও পরবর্তী করনীয় DBBL Primary Section Letter
- স্নাতক ও ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের উপবৃত্তি, মিলবে ১০,০০০
- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তির অনলাইন আবেদন প্রসেস ২০২৪ (DBBL Scholarship Application)
- SSC Result 2024 | এসএসসি রেজাল্ট ( ফুল মার্কশীট সহ)
এনজিও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য অনেক শিক্ষার্থী গমন করছেন।
মাসশেষে আয়: বাংলাদেশে সাধারণত কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কৃষিবিদদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে। তাছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম অবস্থায় উচ্চ বেতন দিয়ে চাকরি শুরু হয়, দিন যত গড়াবে তত বেতন বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেক উচ্চমানের বেতন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, কৃষি সংক্রান্ত এ সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, মোট আসন ১১০৮টি
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, মোট আসন ৩৩০টি
- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, মোট আসন ৭০৪টি,
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, মোট আসন ৪৩১টি,
- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী, মোট আসন ৫৮৭টি,
- চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মোট আসন ২৪৫টি
- খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা, মোট আসন ১৫০টি।
বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group