এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট / এসাইনমেন্ট এর সমাধান/উত্তর- পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ববাংলায় বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরূপণ।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
স্তরঃ এইচএসসি, অধ্যায়ঃ পঞ্চম অধ্যায়, বাংলার ইতিহাস (পাকিস্তান আমল)
অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনামঃ পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই পূর্ব বাংলায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিলো এ বিষয়ে যৌক্তিকতা নিরুপণ।
নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/ পরিধি):
ক) পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য ব্যাখ্যা
খ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্যের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।
গ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা
ঘ) পূর্ব বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নে বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা
এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
ক. পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্থানের রাজনৈতিক বৈষম্য
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতবর্ষের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের উল্লেখ থাকলেও ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় উল্লেখিত অঞ্চলসমূহ নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধিকাংশ অধিবাসী পূর্ববাংলায় বসবাস করলেও এর রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পূর্ববাংলার অধিবাসীদের রাজনৈতিকভাবে মর্যাদা না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী করে রাখা হয়। আবার ১৯৪৭ সো রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা নিজ নিজ দেশের সংবিধানের প্রণয়নের কথা উল্লেখ থাকলেও পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচন হয়েছিল ১৯৫৪ সালে।
ইতোপূর্বে মুসলিম লীগের একাধিপত্য নীতি লক্ষ করে পূর্ববাংলার সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তথা কতিপয় উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা ১৯৪৯ সো মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল এ নবগঠিত রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দকে নানাভাবে কটাক্ষ করে।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও সমমনা দলসমূহ যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে এবং কৃষক শ্রমিক পার্টির প্রধান ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র এ মন্ত্রিসভাকে কখনো দেয়নি। তাদের লক্ষ্য ছিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে জনগণের সম্মুখে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের জনমনে অনীহা ভাব জাগ্রত করা।
পূর্ব পাকিস্তানের লোকজনকে পশ্চিমাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়। এতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও যুক্ত নির্বাচনের দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। নতুন সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে পূর্বাঞ্চলের ওপর প্রেসিডেন্টের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ প্রধান সোহরাওয়ার্দীর নতৃত্বে পুনরায় কেন্দ্র কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও গণতন্ত্রের প্রতি ভীত মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের ষড়যন্ত্রের কারণে মাত্র ১৩ মাসের মাথায় এ মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে যায়।
এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
এরপর বার বার মন্ত্রিসভা গঠন ও বাতিল হওয়ার পালা চলতে থাকলে দেশে শৃক্মখলার চরম অবনতি ঘটে এবং সম্ভবত পশ্চিমা শাসককূল এ রকম একটা ক্ষণের জন্যই অপেক্ষা করছিল। এরূপ রাজনৈতিক বিশৃক্মখলার মাঝে ১৯৫৮ সালের ৭ ই অক্টোবর ইস্কান্দার মীর্জা আইন-শৃক্মখলার অবনতির অজুহাত দেখিয়ে সামরিক আইন জারি করে শাসনতন্ত্র ও মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করেন এবং রাজনৈতিক দল বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।
২১ দিন পর আইয়ুব খান মীর্জাকে অপসারিত করে সমুদয় মতা নিজ হাতে কুক্ষিগত করেন। এর মধ্যদিয়ে পাকিস্তানে ১০ বছরের জন্য গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হয়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদী চেতনাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
আইয়ুব খান মনেপ্রাণে গণতন্ত্র ও পূর্ব পাকিস্তান বিরোধী ছিলেন। তার দশ বছরের শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অধিকাংশ সময়ই রে বন্দি জীবন যাপন করেছেন। তিনি তিনবার নির্বাচনের নামে প্রহসন চালিয়েছেন।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
নির্বাচন ও সরকার গঠন ছাড়াও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বাঙালিদের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার থেকে সজ্ঞানে বঞ্চিত করেছিল। সেক্রেটারী ও মন্ত্রীর পদটি ছিল রাজনৈতিক পদ।মন্ত্রিপরিষদে দেখা যায়, লিয়াকত আলী খানের। ১৯৪৭-৫১ অর্থবছরে মাত্র ৩১.২%, নাজিমুদ্দিনের সময় ৪০%, আইয়ুব খানের সময় মাত্র ৩২%, ইয়াহিয়া খানের সময় মাত্র ৪৫.৫% মন্ত্রী ছিলেন বাঙালি।
তবে এসব বাঙালিদের মধ্যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি। দেখা যায় যে, ১৯৬৪-১৯৬৫ সনে কেন্দ্রীয় সরকারের ১৭ জন সক্রেটারির মধ্যে মাত্র দু’জন ছিল বাঙালি তাও আবার ভারপ্রাপ্ত। সম্পদের ভাগাভাগিতে বাঙালিদের অধিকার সম্বন্ধে যেন কেউ কোন কথা বলতে না পারে, সেজন্য বাঙালিদের কোন সময় অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়োগ করা হতো না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও একই চিত্র দেখা যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা বাঙালিদের পররাষ্ট্র দফতরে নিয়োগ করতো না।
কারণ পাকিস্তানি পররাষ্ট্রনীতি একমাত্র প্রতিক্রিয়াশীল চক্র দ্বারা প্রণীত হতো । বাঙালিদের প্রগতিশীল আদর্শকে তারা কখনো এ কারণে পররাষ্ট্র দফতরে ১০৪ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মচারির মধ্যে দিত না। তি মাত্র ৩০ জন ছিলেন বাঙালি ৷ দ্বিতীয় শ্রেণীর বিক-গেজেটেড ২০৪sco জন কর্মচারীর মধ্যে বাঙালি ছিলেন ৫৫ জন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, বৈষম্য নীতির মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীরা বাঙালিদের সকল রাজনৈতিক অধিকার ও পদ থেকে বঞ্চিত করেছিল । তারা এক্ষেত্রে বাঙালিদের দাবি কোন দিনই মেনে নেয়নি।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
খ. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যেকার প্রশাসনিক ও সামরিক বৈষম্য
প্রশাসনিক বৈষম্যঃ
রাজনৈতিক ক্ষেত্রের ন্যায় প্রশাসনিক বিভাগের বিভিন্ন স্তরে বাঙালিরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেমন পাকিস্তান রেলওয়ের ৮ জন বোর্ড ডাইরেক্টরের মধ্যে মাত্র ১ জন ছিল বাঙালি। রেডিও পাকিস্তান ডিরেক্টরেটে ২০ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মধ্যে ১৯ জনই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি এবং ১ জন ছিল বাঙালি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যেমন পাকিস্তান রেলওয়ের ৮ জন বোর্ড ডাইরেক্টরের মধ্যে মাত্র জন ছিল বাঙালি। রেডিও পাকিস্তান ডিরেক্টরেটে ২০ জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মধ্যে ১৯ জনই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি এবং ১ জন ছিল বাঙালি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি এবং সকল বিভা সদর দফতরগুলো ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারিদের মধ্যে ৮৪% ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি এবং ১৬% ছিল বাঙালি।
এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
সামরিক বৈষম্যঃ
সামরিক, নৌ এবং বিমান বাহিনী নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে উঠেছিল। পাকিস্তানের শাসকবর্গ ছিল স্বৈরাচারী ও গণতন্ত্র বিরোধী। তারা পূর্ববাংলার অধিবাসীদের গণতান্ত্রিক আদর্শ ও স্বাধীনচেতা মানসিকতাকে ভয় পেতো। তারা বাঙালির অতীত সাহসিকতার কথা স্মরণ করে তাদেরকে দুর্বল করে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা বুঝতে ও জানতো বাঙালি সুযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে। তাই কৌশলে প্রতিরক্ষ বিভাগের চাকরিতে বাঙালিদের কমসংখ্যক নিয়োগ করা হতো।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী- সর্বক্ষেত্রে এ বৈষম্যনীতি পরিলক্ষিত হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি। অফিসার পদে বাঙালিদের খুব কম নিয়োগ করা হতো। নিয়োগের সময় ৪/৫ জন বাঙালি সুযোগ পেতো। ১৯৬৬ সালে দেখা পাকিস্তান। হনীতে মোট ১৭ টি উচ্চপদস্থ সামরিক পদের যায়, মধ্যে সেনাবাহিনীর জেনারেল, ২ টি লেফট্যানান্ট জেনারেল ও ১৪ টি মেজর নারেলের মধ্যে মাত্র মেজর জেনারেল পদে ছিল একজন বাঙালি।
সামরিক অফিসারদের মধ্যে ৫% ছিল বাঙালি আর বাকি ৯৫ % ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শুধু অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে নয়, সাধারণ সৈনিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাঙালিদের সুযোগ ছিল সীমিত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫,০০,০০০ সদস্যের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ২০,০০০ জন অর্থাৎ মাত্র ৪%।
উপরিউক্ত ২১১৭.৮১ কোটি টাকা প্রতিরক্ষা মাত্র 16% ব্যয় হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরাট প্রতিরক্ষা বাজেট পূর্বপাকিস্তান থেকে কর জানালো এবং তা পশ্চিমপাকিস্তানে ব্যয় করার এক এভাবে বাজেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি বছর পূর্বপাকিস্তানের সম্পদের এক বৃহৎ অংশ পশ্চিমপাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
গ. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যেকার আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র
পাকিস্তানের দু’অঞ্চ মধ্যে সামাজিক বৈষম্যও প্রকট রূপ লাভ করেছিল। সরব অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পরিকল্পনাগত বৈষম্যের কারণে। নের দু’অঞ্চলের সমাজ জীবন ছিল দু’ধরনের। শাসক মহলের উদ্দেশ্য ছিল, বাঙালিদেরকে অভাব অনটনে ও রোগগ্রস্থ রাখতে পারলে তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবে না। এজন্য কৌশলে পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখা হতো এবং তা বাঙালিদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখার চেষ্টা করা হতো।
রাস্তাঘাট, স্কুলকলেজ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ডাকঘর, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালিদের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা বেশি সুবিধা ভোগ করতো। আবার বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল পশ্চিমাদের সেবার যুবসমাজের উন্নতির জন্য পূর্ব পাকিস্তানে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।
পূর্বপাকিস্তান পশ্চিমপাকিস্তান কর্তৃক সর্বোচ্চ বৈষম্যের শিকার হয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের শোষণের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। ফলে পূর্বপাকিস্তান কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রা ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
কেন্দ্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পূর্বপাকিস্তানের সকল আয় পশ্চিমপাকিস্তানে চলে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক, বিমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ছিল পশ্চিমপাকিস্তানে। ফলে সহজেই সকল অর্থ পশ্চিমপাকিস্তানে পাচার হয়ে যেত। পূর্বপাকিস্তানের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছিল পশ্চিমপাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। উদ্বৃত্ত আর্থিক পশ্চিমপাকিস্তানে জমা থাকত বিধায় পূর্বপাকিস্তানে কোনো মূলধন গড়ে ওঠেনি।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সকল পরিকল্পনা প্রণীত হতো কেন্দ্রীয় সরকারের সদর দপ্তর পশ্চিমপাকিস্তানে সেখানে পূর্বপাকিস্তানের প্রতিনিধি না থাকায় পশ্চিমপাকিস্তানের শাসকরা পূর্বপাকিস্তানকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত। জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানে তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
প্রথমটিতে পূর্ব ও পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১১৩ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি, দ্বিতীয়টিতে বরাদ্দ ছিল ১৫০ কোটি পূর্বপাকিস্তানের জন্য ১৩৫০ কোটি রুপি পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য। তৃতীয়টাতে পূর্ব ও পশ্চিমের জন্য বরান্দ যথাক্রমে ৩৬% ও ৬৩%।
রাজধানী উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বায় বেশির ভাগ ছিল পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে করাচির উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় ৫৭০ কোটি টাকা, যা সরকারি মোট ব্যয়ের ৫৬.৪%। সে সময় পূর্বপাকিস্তানের মোট সরকারি ব্যয়ের হার ছিল ৫.১০%।
১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর ঢাকার জন্য বায় করা হয় ২৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তান পায় মাত্র ২৬.৬%। ১৯৪৭-১৯৭০ পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্বপাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। অথচ রপ্তানি আয় বেশি করলেও পূর্বপাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় ছিল কম অর্থাৎ মাত্র ৩১.১%।
রপ্তানির উদ্বৃত্ত অর্থ পশ্চিমপাকিস্তানের আমদানির জন্য ব্যয় করা হতো। শিল্পকারখানার প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের কাঁচামাল সস্তা হলেও শিল্পকারখানা বেশিরভাগ গড়ে উঠেছিল পশ্চিমপাকিস্তানে। পূর্বপাকিস্তানে কিছু শিল্প গড়ে উঠলেও সেগুলোর বেশিরভাগ মালিক ছিল পশ্চিমপাকিস্তানিরা। ফলে শিল্পক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানকে নির্ভরশীল থাকতে হতো পশ্চিমপাকিস্তানের ওপর।
সামাজিক বৈষম্য
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। সরকারের অর্থনৈতিক এবং পরিকল্পনাগত বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম থেকেই বঞ্চনার শিকার হয়। পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে দু’ধরণের সমাজ জীবন পরিচালিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসীরদের জীবন যাপন উন্নতমানের হলেও পূর্ব বাংলার মানুষ ছিল বৈষম্যের শিকার। বাঙালিরা যাতে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারে এজন্য তাদেরকে অভাব অনটন ও রোগগ্রস্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যেও দামের পার্থক্য থাকতো, যাতে তা বাঙালিদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেবার জন্য অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠলেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের জীবনযাত্রার মান ছিল অনেক উন্নত।
এইচএসসি ২০২১ ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান
ঘ. পূর্ব বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নে বৈষম্য
শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য
শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাঙালিরা সুস্পষ্ট বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পশ্চিমা শাসকচক্র বাঙালিদের অশিক্ষিত রেখে তাদের শাসনকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমে শাসক ও শোষক শ্রেণী গড়ে তোলাই ছিল তাদের লক্ষ।
তাদের ভয় ছিল বাঙালিরা শিক্ষিত হলে চাকরিসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এবং দেশ শাসনে অংশীদারিত্ব দাবি করবে। এজন্য পূর্ব পাকিস্তানে নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষে তেমন। গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ওপরন্তু এ অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারতার গতিকে রুদ্ধ করে রাখার লক্ষে নানা ছল-চাতুরীর আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের নিরক্ষর রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ফলে পূর্বপাকিস্তানে শিক্ষার উন্নয়নে কোনো চেষ্টা তারা করেনি। এছাড়া বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে শিক্ষার মাধ্যম করা বা আরবি হরফে বাংলা লেখার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানতে চেয়েছিল। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে পূর্বপাকিস্তানের প্রতি চরম বৈষম্য দেখানো হয়।
১৯৫৫ থেকে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের মধ্যে পশ্চিমপাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৮৪ মিলিয়ন রুপি এবং পূর্বপাকিস্তানের জন্য ছিল ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি পাকিস্তানের সর্বমোট ৩৫টি বৃত্তির ৩০টি পেয়েছিল পশ্চিমপাকিস্তান এবং মাত্র ৫টি বরাদ্দ ছিল পূর্বপাকিস্তানের জন্য।
১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৬৮-৬৯ সময়কালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকস্তিানে শিক্ষার অগ্রগতি:
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র উল্লেখযোগ্য খেলার মাঠ ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে এ ধরনের অনেকগুলো স্টেডিয়াম ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে খেলাধুলার জন্য কোন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। সরকার কখনোই এ ব্যাপারে বাঙালিদের উৎসাহ দেয়নি।
সাংস্কৃতিক বৈষম্য
দুই অঞ্চলের ভাষা সাহিত ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্বপাকিস্তানের অধিবাসী ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬%। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল হাজার বছরের পুরনো। অপরদিকে ৪৪% জনসংখ্যার পশ্চিমপাকিস্তানে বিভিন্ন ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। উর্দুভাষী ছিল মাত্র ৩.২৭%। অথচ তা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষা ও সুসমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত হয় পশ্চিমা শাসকরা।
প্রথমেই তারা বাংলা ভাষাকে নির্মূল করার চেষ্টা করে এবং বাংলা ভাষাকে আরবি বর্ণে লেখার ষড়যন্ত্র শুরু করে। বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথের সংগীত, নাটক ও সাহিত্য। বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানার জন্য রবীন্দ্রসংগীত রচনাবলি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। পহেলা বৈশাখ পালনকে হিন্দু প্রভাবজ বলে উল্লেখ করে সেখানেও বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। এভাবে বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে সাংস্কৃতিক বৈষম্য সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়।
এইচএসসি ২০২১ অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান লিস্ট
পরীক্ষার বছর | সপ্তাহের নাম | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ১ম সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ২য় সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ৩য় সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ | ৪র্থ সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এএইচএসসি ২০২১ | ৫ম সপ্তাহ | অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর |
এইচএসসি ২০২১ পরীক্ষা যেভাবে হবে
গত বছর মার্চে অতিমারি করোনায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ, বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধাপে ধাপে বিভিন্ন খাতে ছন্দ ফিরলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুয়ার খোলেনি।
দেড় বছরের বেশি সময়ের স্থবিরতা কাটিয়ে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মাধ্যমিক আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।
স্বাভাবিক সময়ে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা বছরের প্রথম চতুর্ভাগে হলেও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে এ বছর এখনও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
এইচএসসি ৬ষ্ঠ সপ্তাহ ইসলামের ইতিহাস অ্যাসাইনমেন্ট
এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কেন্দ্রে আসন বিন্যাস করা হবে ইংরেজি ‘জেড’ বর্ণের আকারে এক বেঞ্চে একজন করে বসিয়ে।
এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি এবং এইচএসসির প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
সকাল-বিকেল দুই শিফটে এসব পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।
পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ, এসাইনমেন্ট সলভ, বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group
Thanks broo❤️❤️❤️❤️