বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ইউরোপে স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ। শিক্ষা মানুষের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। তবে লক্ষ লক্ষ মানুষ শিক্ষা থেকে বিশেষত উচ্চশক্ষিা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলস্বরূপ, তাদের উচ্চশিক্ষিত হওয়ার, দক্ষতার বিকাশ করার এবং নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করার অধিকার ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করার সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মনে শঙ্কা বিরাজ করে। বিশেষ করে তৃতীয় বর্ষ পাশ করার পর এই চিন্তাটি মস্তিষ্কের সর্বত্র সিগন্যাল দেয় যে এই দেশে চাকরি নাই, এতো পড়াশোনার দরকার কি ইত্যাদি।
আবার কেউ কেউ উচ্চবর্গীয় রেজাল্ট করে নিজের সম্ভবনাটুকুকে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রজ্জ্বলিত করে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আবার স্তিমিত হয়ে যায়। তাই অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করে।
তোমারও স্বপ্ন যদি হয় ইউরোপে গিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার তাহলে এবার সেটি সত্যি হবে।বিশ্বাস হচ্ছে না ? তাহলে এখন থেকে বিশ্বাস করা শুরু করে দাও।
বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে Full Funded স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর। আমরা সবাই জানি ইউরোপ খুব উন্নত একটি মহাদেশ এবং পড়াশুনার মানও অনেক ভলো।
বিশ্বের অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেই অভভিাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার টিউশন ফি দিতে পারছেন না। তাই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের মেধাবীদের জন্য স্কলারশীপের সুসংবাদ নিয়ে এসেছে উন্নত দেশগুলোর বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ থেকে যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে যায় তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই পিএইচডি কিংবা মাস্টার্স প্রোগামের জন্য যায় । তবে এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদেরই কেবল জয়জয়কার। বর্তমানে কিছু কিছু আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগামেও শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দেওয়া হচ্ছে।
ইউরোপে প্রতি বছর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করার জন্য অনেকগুলো স্কলারশীপ প্রদান করে। যার মধ্যে ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ অন্যতম। র্বতমানে ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থা, দৃঢ় র্অথনীতি ও মানসম্পন্ন উচ্চশক্ষিার জন্য বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদরে জন্য দেশটি আদর্শ হতে পারে। বিশ্বের চাকরির বাজারে চাহিদা আছ, এমন সব বিষয়েই পড়ার সুযোগ আছে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কিন্তু এই স্কলারশীপ নিতে হলে আসলে কি কি করতে হয়, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।
শুরুতেই ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশপি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা বলি।
১.Full Funded স্কলারশপি : এটি Full Funded একটি স্কলারশীপ অর্থাৎ পড়াশুনার জন্য তোমার বাড়ি থেকে কোনো টাকা নিতে হবে না।
২.Funded by European Union : Funding টি European Union থেকে দেয়া হয়ে থাকে।
৩.Joint Masters / Double Degree : এটি ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশপি এর অনন্য বৈশিষ্ট্য। Joint Masters / Double Degree আসলে কি ?
Joint Masters / Double Degree হলো তুমি একের অধিক মানে ২ থেকে ৩ টি Masters Degree অর্জন করতে পারবে ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশপি এর অধীনে।
৪.Study at least 2/3 European countries: ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশপি এর অধীনে তুমি ইউরোপের ২ থেকে ৩ টি দেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে। এবং আলাদা আলাদা সার্টিফিকেট তোমাকে দেওয়া হবে। সেই সাথে তোমাকে Joint Masters Degree বা সম্মিলিত মাস্টার্স ডিগ্রীর একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
সহজ করে বললে এই স্কলারশীর মাধ্যমে তুমি ফ্রান্স , জার্মানি , স্পেন , সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে পড়াশুনা করার সুযোগ পাবে। তবে Country selection টি তুমি যে প্রোগ্রামে এ আবেদন করবে তার উপর নির্ভর করবে।
ফিনল্যান্ড: উত্তর ইউরোপীয় দেশ ফিনল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষা এখন সরকারের অর্থায়নে। যা ইউরোপের বাইরের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মূলত, বিদেশী শিক্ষার্থীদের স্থানীয় ভাষা শেখার জন্য উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।
নরওয়ে: নরওয়েতেও মাস্টার্স স্তরের উচ্চ শিক্ষা একেবারে বিনামূল্যে। স্নাতক স্তরের বেশিরভাগ প্রোগ্রাম স্থানীয় নরওয়েজিয়ান ভাষায় করা হয়। এই কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীদের স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা দেখাতে হবে। তবে মাস্টার্স অধ্যয়ন সাধারণত ইংরেজিতে হয়।
জার্মানি: জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলেfতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ বিদেশী শিক্ষার্থী। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানে স্নাতক স্তরে জার্মান ভাষায় ক্লাস হয়। তাই স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা বাধ্যতামূলক। বিদেশী শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে পারে।
ফ্রান্স: জার্মানির মতো এই দেশে স্নাতক স্তরের বেশিরভাগ প্রোগ্রাম ফরাসী ভাষায় শেখানো হয়। যারা ফরাসি ভাষা জানেন তারা টিউশন ফি ছাড়াই দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন। আপনি ফ্রেঞ্চ কোর্স করার মাধ্যমে ফ্রান্সে বিনামূল্যে পড়তে পারবেন।
৫.Free application : ইউরোপের এই স্কলারশীপটিতে আবেদন করার জন্য তোমাকে কোন টাকা দিতে হবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ন ফ্রিতে আবেদন করা যাবে।
৬.Online application : ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশপি এর জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
৭.স্কলারশীপ amount :
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপের মাধ্যমে খুব ভালো মানের একটি Funding ( 9000 Euro tuition fees per year ) পাবে। যাতায়াত খরচ ( 3000 Euro travel cost per year ) পাবে। এছাড়াও (1000 Euro Monthly Stipend ) পাবে। এককালীন ( ( 1000 Euro Installment cost ) দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে মোট ৪৯ হাজার ইউরো দেওয়া হয় যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা।
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ এ আবেদন করার যোগ্যতা
১. ব্যাচেলর ডিগ্রী নূনতম তিন বছরের হতে হবে।
২. আইইএলটিএস এ নূন্যতম ৬.৫ এবং প্রত্যেক ব্যান্ডে ৬ থাকতে হবে। টোফেল এ নূন্যতম ৮৩ থাকতে হবে।
৩. সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.০০ থাকলে আবেদন করা যাবে।
৪. যেকোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ এর জন্য আবেদন করা যাবে।
৫. সর্বোচ্চ ৩ টি মাস্টার্স ডিগ্রী প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবে।
কিভাবে আমরা স্কলারশীপের জন্য আবেদন করব:
ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ এর জন্য আবেদন করা খুবই সহজ। প্রথমেই আমাদের কাঙ্খিত মাস্টার্স ডিগ্রী প্রোগ্রামটি বাছাই করে নিতে হবে। প্রত্যেকটি মাস্টার্স ডিগ্রী প্রোগ্রামের জন্য আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট থাকবে। ঐ ওয়েবসাইট গুলোতে একটি অনলাইন Portal আছে। উক্ত Portal এ সমস্ত ডকুমেন্ট পিডিএফ আকারে আপলোড করতে হবে। এভাবে আমরা আবেদন করতে পারব।
তোমার মনের কিছু প্রশ্নের উত্তর:
১। ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ প্রোগ্রামের আওতায় স্টাডি করার সময় পার্ট – টাইম জব করা সম্ভব ?
উত্তর : হ্যা। প্রত্যেক সপ্তাহে ২০ ঘন্টা জব করা যাবে । জবের সিস্টেম নির্ভর করবে তুমি কোন দেশে পড়াশুনা কর তার উপর।
২। অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্থায় আবেদন করা যাবে কী না ?
উত্তর : হ্যা। অনার্স ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্থায় আবেদন করতে পারবে।
৩। ইতিমধ্যে একটি মাস্টার্স করা আছে। দ্বিতীয় মাস্টার্সে আবেদন করা যাবে কী না ? এতে কোন ক্ষতি হবে কী?
উত্তর: হ্যা। আবেদন করা যাবে। এতে কোন ক্ষতি হবে না।
৪। কিছুদিন আগে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, কোন জবের অভিজ্ঞতা নেই। স্কলারশীপে আবেদন করার জন্য কোন জবের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে?
উত্তর : স্কলারশীপে আবেদন করার জন্য জবের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে না। থাকলে ভালো কিন্তু না থাকলে কোন ক্ষতি হবে না।
শেষ কথা :
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়ার জন্য লক্ষ্য ঠিক করা একজন শিক্ষার্থীর বাসনাটিও তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়া প্রয়োজন। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশীপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপে যায়।
উচ্চশক্ষিার জন্য সবাই আশা করে থাকে ভালো একটা স্কলারশীপের। আশা করি আজকের আলোচনা থেকে তুমিও নিজের জন্য একবার চেষ্টা করার অনুপ্রেরণা পাবে।
অন্যরা যা পড়েছে,
- শিক্ষা লোন কি? কীভাবে এই লোন পাওয়া যাবে
- সিজিপিএ 4.03(Out of 4) পেয়েছে ঢাবির এক শিক্ষার্থী
- বর্তমানে চলমান ৩৫টি চাকরি বিজ্ঞপ্তি BD All Jobs
- বিসিএস প্রস্তুতি শুরু থেকেই যা করবেন
- বৃত্তির টাকা পেতে নিজ নামে অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ
- Digital Bangladesh Quiz এ অংশ নিন, ল্যাপটপ জিতুন
Follow us on
Opportunity for Bangladeshi students to study in Europe with scholarships Opportunity for Bangladeshi students to study in Europe with scholarships