মেডিকেল এডমিশন এর প্রস্তুতি, মেডিকেল এডমিশন পরীক্ষা অতি সন্নিকটে। এখন নষ্ট করার মতো সময় একদমই নেই। হাতে খুবই কম সময়।
আর এই কম সময়েই নিতে হবে মেডিকেল এডমিশন এর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। তুমি যদি ম্যাট অ্যাস্পিরেন্ট হও, তোমার স্বপ্ন যদি হয় সাদা এপ্রোন তবে আজকের এই পোস্টটি তোমার জন্য।
মেডিকেল এডমিশন এর প্রস্তুতি নেয়ার আগে তোমাকে জানতে হবে যে তুমি যে স্বপ্ন দেখছ, সেটা আসলেই তোমার স্বপ্ন কিনা। অর্থাৎ সত্যিই তুমি মেডিকেলে পড়তে চাও কিনা বা চাইলে কতটুকু চাও এবং তার জন্য তুমি কতটা ডেডিকেশন দিতে পারবে বা কতটা ত্যাগ স্বীকার ও পরিশ্রম করতে পারবে- এ প্রশ্নগুলো আগে নিজেকে করো।
মেডিকেল এর মতো এতো কঠিন একটা জায়গায় যে পরিমাণে চাপ রয়েছে তা সামলানোর মানসিকতা তোমার আছে তো? উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়, তবেই প্রিপারেশন নিতে বসে যাও। মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন রক্ষাকারী একটি প্রফেশনে যাওয়ার সুযোগ পেতে হলে তেমাকে শতভাগ যোগ্যতা অর্জন করেই যেতে হবে।
তবে তার জন্য কিছু গাইডলাইন অবশ্যই দরকার। আর এই পোস্টে মেডিকেল এডমিশন এর প্রস্তুতি সম্পর্কে আলেচনা করা হবে। সাথে মেডিকেল এডমিশন পরীক্ষার্থীদের জন্য যেসব কাজ অবশ্যই গ্রহণ ও বর্জন করতে হবে তা নিয়েও থাকবে কিছু কথাবার্তা ।
১) প্রথমেই জেনে নাও মানবন্টন:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতাঃ
# এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমান এ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে এবং দুটো পরীক্ষা মিলিয়ে নূন্যতম জিপিএ ৯.০০ থাকতে হবে।
পরীক্ষার মানবন্টনঃ
পূর্ণ নম্বর = ৩০০
[( SSC GPA *15) + (HSC GPA *25)] = ২০০
MCQ = ১০০ নম্বর
জীববিজ্ঞান – ৩০
পদার্থ – ২০
রসায়ন -২৫
ইংরেজি– ১৫
সাধারণ জ্ঞান – ১০( বিষয়: বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ)
২) কোচিং নাকি বাসায় প্রস্তুতি?
প্রথমেই বলবো, ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং আহামরি কোনো বিষয় না। তবে সঠিক গাইডলাইন ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য কোচিং এর প্রয়োজন রয়েছে। দুই লাইনে দুই রকম কথা মনে হচ্ছে? তাহলে ব্যাপারটা খুলে বলছি-
কোচিং থেকে তুমি একটি গাইডলাইন পাবে সত্য, কিন্তু গাইডলাইন তুমি তোমার আশেপাশের পরিচিত কারো থেকে কিংবা আত্মীয়স্বজন, সিনিয়র ব্যাক্তিবর্গের কাছ থেকে নিতে পারো অথবা নেট ঘেঁটেও পেয়ে যেতে পারো।
আর নিয়মানুবর্তিতা হলো একান্তই তোমার নিজের ব্যাপার। কারণ যে নিয়মানুবর্তী সে কোচিং করুক বা না করুক নিয়মিত পড়াশুনা সে করবেই।
শুরুতেই বলেছি, মেডিকেল কঠিন জায়গা তাই স্বপ্ন যদি মেডিকেল হয় তাহলে “অলসতা”, ” ভাল্লাগে না”, ” মন খারাপ” ইত্যাদি শব্দগুলো তোমার ডিকশনারি থেকে এখনই বাদ দিতে হবে।
আর তাছাড়া কোচিং এ যাতায়াতের জন্য সময় খরচ না করে তুমি যদি সেই সময়টা বাসায় দিতে পারো তবে সেটা বেশি কার্যকর হবে। আবার একসাথে একাধিক কোচিং করাটাও অযৌক্তিক।
তবে একান্তই ইচ্ছুক হলে ভালোমতো খোঁজ-খবর নিয়ে ভালো সার্ভিস দেয় এরকম একটা কোচিং এ ভর্তি হতে পারো।
তবে কখনোই রংচঙে চকচকে আকর্ষণীয় সাইনবোর্ড লিফলেট দেখে প্রলোভনে পরে কোথাও ভর্তি হওয়া যাবে না, এতে পরবর্তীতে হীতে বিপরীত হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো কোচিং তোমাকে শুধু পথ দেখাবে, পথ তোমাকেই চলতে হবে।
৩) বিষয়ভিত্তিক বইসমূহ ও প্রিপারেশন গাইডলাইন:
মেডিকেল এডমিশন এর প্রশ্ন মেইন বই থেকে হয়। তাই অযথা কোনো অতিরিক্ত গাইড বই এর প্রেশার না নেয়াই ভালো। মেইন বইয়ের কোনো বিকল্প মেডিকেল এডমিশন এর জন্য নেই। এখানে বিষয়ভিত্তিক কিছু বইয়ের সাজেশন দেওয়া হলো-
জীববিজ্ঞান- আবুল হাসান
রসায়ন- হাজারী ও নাগ
পদার্থবিজ্ঞান- আমির ও ইসহাক
ইংরেজি – Apex / English for competitive exams এর যেকেনো একটি।
সাধারণ জ্ঞান -MP3, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স / কারেন্ট ওয়ার্ল্ড -এগুলোই মোটামুটি যথেষ্ট।
যা যা যেভাবে পড়তে হবে:
★বারবার মেইন বইগুলোর গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো রিভিশন দিয়ে মনে রাখতে হবে।
★বিগত বছরের মেডিকেল + ডেন্টাল এডমিশন এর প্রশ্নব্যাংক সলভ করতে হবে।
★ প্রতিদিন যে টপিক পড়বে সেই টপিকের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে সাথে সাথেই।
★পাশাপাশি ঢাবি, জাবি ও অন্যান্য স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত দশ বছরের প্রশ্ন সলভ করতে হবে।
★ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিসিএস ও বিগত কয়েক বছরের সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও দেখতে হবে।
৪) কত ঘন্টা পড়বো?
স্টুডেন্টদের এটা একটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন যে “আমি কত ঘন্টা পড়বো?”
উত্তর হচ্ছে- যতক্ষণে তোমার পড়া শেষ না হয় ততক্ষণ পড়ো।
এমন না যে তোমাকে প্রতিদিন ১২/১৪ ঘন্টা পড়তে হবে। যদি ১২-১৪ ঘন্টা পড়ার টেবিলে থেকেও তোমার কিছুই পড়া না হয়, তাহলে তো কোনো লাভই হলো না তাই না?
তার চেয়ে প্রতিদিনের একটা রুটিন সাজিয়ে ফেলো যে আজকে এই চ্যাপ্টারটা পড়বো, কালকে এই টপিকটা শেষ করবো এবং এভাবে পুরো সপ্তাহে এই কয়টা বইয়ের এতখানি শেষ করবো। এভাবে পড়লে আশা করা যায় তুমি ভালো করবে।
৫) মাথা ঠান্ডা রাখো:
এডমিশন টাইমে মাথা ঠান্ডা রাখা খুবই জরুরি। কেননা এসময় এমনিতেই অনেক প্রেশার থাকে, তাই মাথা ঠান্ডা না রাখলে পড়া মনে রাখতে ঝামেলা হতে পারে।
এসময় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কারো সাথে ঝগড়া, মারামারি বা মনোমালিন্য কোনোটাই করা যাবে না।
এরকম করলে ঐ বিষয়গুলোই মাথায় ঘুরপাক খায় যার ইফেক্ট পড়ার উপর পরে। ফলে রেজাল্ট খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাই মেডিকেল এডমিশন এ দ্রুত প্রস্তুতির জন্য অন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, যাতে পঠিত বিষয় সহজেই মাথায় থাকে।
আর আরেকটা কথা কোনো কিছুতেই হাইপার হওয়া যাবে না, কোনো স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। মাথা ও মাইন্ড রাখতে হবে একেবারে ঠান্ডা ঠান্ডা, কুল কুল। নামজ পড়তে হবে নিয়মিত এতে মন শান্ত থাকবে।
৬) ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার:
ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন টপিকের কনসেপ্ট ক্লিয়ারের জন্য ভিডিও দেখতে পারো। এর সদ্ব্যাবহার তোমার প্রিপারেশনকে বুস্ট আপ করতে সাহায্য করবে।
এখন যেহেতু অনলাইনেই ক্লাস চলছে , তোমাকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসগুলোয় মনোযোগ দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী গুছিয়ে নোট তৈরি করতে হবে। পরীক্ষার আগের মুহূর্তে এই নোট গুলোই বারবার রিভিশন করতে হবে।
অনলাইন পরীক্ষা ও মডেল টেস্ট এ অংশগ্রহণ করতে হবে।তবে কোনো পরীক্ষায় কম নাম্বার পেলে ভেঙে পরা যাবে না। নতুন উদ্যোমে আবার শুরু করতে হবে।
তবে হ্যাঁ, কোনো ভাবেই সোশাল মিডিয়া বা অন্যান্য জায়গায় অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না।
৭) ভয়কে জয় করো
“আমাকে দিয়ে হবে না”, ” আমি পারবো না”- এ ধরণের চিন্তা ভুলেও মাথায় আনা যাবে না। মনের সব ভয় ও সংশয় ঝেড়ে ফেলো। মনে রেখো- তুমিই পারবে, তোমাকে দিয়েই হবে -যদি তোমার প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকে। আছে তো?
আত্নবিশ্বাসী হতে হবে তোমাকে। নিজেকে নিজেই বলতে হবে-হ্যা আমিই পারবো, আমাকে দিয়েই সম্ভব, মেডিকেল এর চার হাজার সিটের মধ্যে একটা আমি পাবোই!
৮) শুধু চান্স পাওয়াটাই জীবন নয়
অনেকেই ভাবে চান্স না পেলে বুঝি জীবন শেষ, চান্স না পেলে এই হবে সেই হবে, লোকে কি বলবে- এসব চিন্তা করে মগজ নষ্ট করা যাবে না । জীবনের সফলতার জন্য ভালো জায়গায় চান্স পাওয়াটা খুবই জরুরি কিন্তু শুধু চান্স পাওয়াটাই জীবন নয়।
দেখো, ভাগ্য তো মানুষের হাতে নেই। মানুষের হাতে আছে চেষ্টা করা, পরিশ্রম করা।
নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে যাও সফলতা আসবেই। কেননা- “পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি” সব শেষে বলবো, মেডিকেল এডমিশন এর সর্বোচ্চ প্রস্তুতির জন্য বারবার মেইন বই গুলো রিভিশন দিতে হবে।
কারণ একটা বিষয় তুমি যতবার পড়বে সেটা ততই তোমার মনে গেঁথে যাবে। তাই এই সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগাও আর সফলতার পথে এগিয়ে যাও।
অন্যরা যা পড়েছে,
- শিক্ষা লোন কি? কীভাবে এই লোন পাওয়া যাবে
- সিজিপিএ 4.03(Out of 4) পেয়েছে ঢাবির এক শিক্ষার্থী
- বর্তমানে চলমান ৩৫টি চাকরি বিজ্ঞপ্তি BD All Jobs
- বিসিএস প্রস্তুতি শুরু থেকেই যা করবেন
- বৃত্তির টাকা পেতে নিজ নামে অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ
- Digital Bangladesh Quiz এ অংশ নিন, ল্যাপটপ জিতুন
Follow us on
Want to be a doctor
Yes