কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল বয়কট এর আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠেছে ইউরোপ জুড়ে। মানবাধিকার এবং পরিবেশগত উদ্বেগ তুলে ধরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ আন্দোলন।
জার্মান বুন্দেসলিগার খেলাগুলোতে ‘বয়কট কাতার ২০২২’ ব্যানারগুলো এখন একটি পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। ফুটবল বিশ্বকাপ বয়কটের এ আন্দোলন প্রতিনিয়ত টিভিতে লাখ লাখ লোক দেখছে।
বিশ্বকাপ যত ঘনিয়ে আসছে ততই তীব্র আন্দোলনের বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে।
এটি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এছাড়া কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ফিফার প্রতিনিধিদের ঘুষ দেওয়া হয়েছে, যা অন্যায়।
তবে ঘুষের অভিযোগটি কাতার এবং ফিফা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
কাতার বিশ্বকাপ বয়কট
শিরোপা জয়ী জার্মান অধিনায়কের সমর্থন
আট বছর আগে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে জার্মানিকে নেতৃত্ব দেওয়া ফিলিপ লাম বলেছেন, অফিসিয়াল প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে বা ভক্ত হিসেবে তিনি কাতারে যাবেন না।
যেখানে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে তারা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজ করে তাহলে সেটি বয়কট করা উচিত।
এরকম একটি অঞ্চলে বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করার কোনো মানে হয় না। এজন্য লাম কাতার বিশ্বকাপ বয়কট আন্দোলনকে সমর্থন করেন বলে মত দিয়েছেন।
আন্দোলন ঘিরে জার্মানি-কাতারের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব
এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে। গত অক্টোবরে জার্মান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সমালোচনা করেছিলেন।
ন্যান্সি ফেসার দোহায় অবস্থিত জার্মান রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করেছিলেন।
কাতার বিশ্বকাপ বয়কট
তবে সম্প্রতি কাতারে জার্মান সমকামীদের জন্য ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ন্যান্সি। জার্মানির অভ্যন্তরীণ এই মন্ত্রী দেশের হয়ে খেলাধুলার বিষয়টিও তদারকি করেন।
ন্যান্সি ফেসারের অভিযোগের পরে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি বলেছেন, কাতারে সমস্ত দর্শকদের স্বাগত জানানো হবে এবং সম্মানের সঙ্গে আচরণ করা হবে। অবিবাহিত দম্পতিদের বাসস্থান আলাদা করা হবে না।
অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ
অভিযোগ উঠেছে, ২০১০ সালে কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণার পরে স্টেডিয়াম মেরামত কাজে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছে।
তবে জাতিসংঘের মতে, সব মৃত্যুর ঘটনা স্টেডিয়াম নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না।
এ বিষয়ে কাতারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে প্রতিটি পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে।
কাতার বিশ্বকাপ বয়কট
ফিনল্যান্ডের প্রাক্তন পেশাদার ফুটবলার টিম স্পারভ কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের বিষয়েও কথা বলেছেন।
স্পারভ অভিবাসীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করেছেন। তবে এর জন্য কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের পক্ষে নন তিনি। তার মতে, কাতারকে সুযোগ দেওয়া উচিত।
বয়কটের থেকে অন্যান্য বিকল্প রয়েছে। আমি দেখতে চাই, আসর চলাকালীন খেলোয়াড়, ফেডারেশন, কোচ এবং দলগুলোর সঙ্গে কাতার কেমন আচরণ করে। তারা সমস্যাগুলোর সমাধান করুক।
অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগের বিষয়ে কাতার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দেশের শ্রম আইন সংশোধন করেছে এবং একটি ন্যূনতম মজুরি চালু করেছে।
তবে এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের নির্যাতনের ঘটনা রয়ে গেছে এবং শ্রম আইন সংস্কার এখনো অসম্পূর্ণ।
এদিকে কাতার বিশ্বকাপ বয়কট করে স্পেন এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহরে বিশ্বকাপের খেলা দেখাতে অস্বীকার করেছে।
একটি অপেশাদার ক্লাবের ফুটবলার স্টিফেন শিমার বলেছেন, ‘আমরা নিজস্ব উপায়ে মানুষকে কাতার বিশ্বকাপ বয়কট করতে উত্সাহিত করছি।
আমি বিশ্বকাপের কোনো খেলা দেখব না এবং বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের সময়ে আমরা নিজেদের দলের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ খেলার আয়োজন করব।’
বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group