বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে যাবে। এখনই অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না হওয়ার কারণে কর্মী ছাঁটাই করছে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই না করলেও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বাংলাদেশে প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭.৩৯%)। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বেকারত্ব বাড়ছে।
তাই চাকরির বাজারের এই গুরত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় কিভাবে এগিয়ে রাখা যায় সেটা আপনাকে খুজে বের করতে হবে। করোনায় যেমন ৫০% এর অধিক মানুষের চাকরী হারিয়েছে ঠিক তেমন আবার নতুন নতুন চাকরীর সেক্টর তৈরি হয়েছে। তো নিজেকে সেভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করুন।
ব্যক্তিগত ব্রান্ডি
ব্যক্তিগত ব্রান্ডিং হলো একজন ব্যক্তিকে তার শিল্পে কর্তৃত্ব হিসাবে চিহ্নিত করে, তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে উন্নীত করে, এবং প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে আলাদা করে, চূড়ান্তভাবে তাদের ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে, প্রভাবের বৃত্ত বৃদ্ধি করার জন্য জনসাধারণের উপলব্ধি তৈরি করে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মতে ‘আপনি ঘরে না থাকাকালীন অবস্থায় লোকেরা আপনাকে নিয়ে যা বলে তাই হলো আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড’
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের যেমন একটি ব্র্যান্ড থাকে তেমনি প্রতিটি ব্যক্তির ও ব্র্যান্ডিং থাকে। আপনি সক্রিয়ভাবে এবং সচেতনভাবে এটিকে তৈরি করুন বা না করুন, অন্যরা গঠন করবে এবং আপনার ব্যাপারে মতামত জানাবে। সর্বাধিক সফল চাকরিপ্রার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের এমনভাবে চাষ করেন ঠিক যেমন বড় কর্পোরেশন তাদের পণ্যের জন্য করে। এটি একটি স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন এবং অনন্য প্রস্তাব থাকার বিষয়ে যা নিয়োগকর্তা এবং নিয়োগকারীরা বিশ্বাস করবে।
আমরা বিশ্বব্যাপী করোনা এবং লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভূমিকার জন্য প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে এবং যাঁরা অপেক্ষায় আছেন তাদের চাকরি সন্ধানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চাকরির বাজারে আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডটি তৈরি করার জন্য এখানে আমাদের কিছু পরামর্শ:
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার
১. আপনি কিসের জন্য পরিচিত?
আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের একটি কেন্দ্রে রয়েছে। আপনার কাজকর্ম সম্পর্কে ভেবে কিছু সময় ব্যয় করুন। আপনি যা কিছু শিখেছেন এবং যা আপনি বিকাশ করেছেন তার সমস্ত জিনিস। সর্বোপরি, ক্যারিয়ারের সময় এমন জিনিসগুলি সম্পর্কে ভাবুন যা আপনি সবচেয়ে বেশি গর্বিত। আপনার বিশ্বাস্ব লোকদের কাছে আপনার সম্পর্কে মতামত জিজ্ঞাসা করুন। তারপর আপনি নিজেকে কোন পর্যায়ে দেখতে তা ভেবে দেখুন। এই সমস্ত একসাথে আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড গঠনে সহায়ক হব ।
২. অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরুন
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি। এক্ষেত্রে অন্যদের থেকে নিজেকে কিভাবে আলাদা প্রমাণ করবেন।
এছাড়া সত্যতা যে কোন সফল ব্র্যান্ডের মূল উপাদান। অন্য কাউকে অনুসরণ করে তার মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং হলো আপনি কে এবং আপনি কীসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন তা বোঝানোর একটি উপায়। খাঁটি হন এবং আপনি আরও আত্মবিশ্বাসী, আরও বিশ্বাসযোগ্য এবং আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবেন।
আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্যরা কিংবা অন্যান্য পরিচিতরা-যেই হোক না কেন তাদেরও পরিচিত আরো অনেক মানুষ থাকে। যাদের মধ্যে কেউ হয়তো নিয়োগকর্তা হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে আপনার চাকরির খোঁজ সম্পর্কে বলে রাখতে পারেন।
কারণ, পরিচিত থাকলেই যে চাকরি হবে সেটা হয়তো না, কিন্তু অনেক নিয়োগকর্তাই রয়েছেন যারা পরিচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। এছাড়া পরিচিত থাকলে আপনি হয়তো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসার আগে থেকেই জানতে পারবেন যে কোথায় চাকরির সুযোগ রয়েছে আর কোথায় নেই।
৩. নিজের ব্যাপারে বলতে শিখুন
আপনি আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের দ্বীপ্ত কন্ঠ। আপনি আপনার ব্যক্তিগত গল্পটি বলতে পারেন এমন সমস্ত উপায়ের কথা ভাবেন। নেটওয়ার্কিং এবং সাক্ষাতকারের জন্য এটি প্রয়োজনীয়। উভয় পরিস্থিতিতে আপনাকে যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হতে পারে তার মধ্যে একটি হল ‘নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?’ আপনার সিভি এবং আপনার প্রোফাইলটিকে ব্র্যান্ডিং স্টেটমেন্ট হিসাবে ভাবেন। তেমনি, লিঙ্কডইনে আপনার প্রোফাইল। লিংকডইন-এ আপনার করা প্রতিটি মন্তব্য, আপনার ভাগ করা প্রতিটি পোস্ট, আপনার নেটওয়ার্কে থাকা প্রতিটি কথোপকথন আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডে অবদান রাখবে।
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার এবং আপনার করনীয়
৪. সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠুন
আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডটি যোগাযোগ করার জন্য অনেকগুলি উপায় এবং সুযোগ প্রদান করে, সুতরাং এটি ধারাবাহিক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ আপনার সিভি এবং লিঙ্কডইন প্রোফাইল। আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইল অনুযায়ী শ্রোতাদের একই গল্পটি বলা উচিত। যদি কেউ উভয়ই পড়তে থাকে তবে মনে হবে তারা একই ব্যক্তির সম্পর্কে পড়ছে।
৫. সকলের কাছে দৃশ্যমান হতে চেষ্টা করুন
আপনার সিভি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে সাক্ষাৎকারের জন্য শর্টলিস্টে আপনার জায়গা থাকে। নিশ্চিত হয়ে নিন যে সিভির প্রথম পৃষ্ঠাটি একটি মার্জিত স্টাইলে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আছে। যদি এটি না হয় তবে নিয়োগকারী দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়বেন না। লিঙ্কডইনটিতে আপনার প্রোফাইল এবং ক্রিয়াকলাপের বাইরে থাকা দরকার যাতে নিয়োগকারীরা আপনাকে খুঁজে পায় এবং মনে হয় আপনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। সম্মেলন এবং ইভেন্টগুলি (ভার্চুয়াল বা অন্যথায়) লিংকড-ইনে নিয়মিত যোগ করুন।
চাকরী প্রার্থীদের জন্য নেটওয়ার্কিং কৌশল
নেটওয়ার্কিং হলো সর্বাধিক কার্যকর ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে একটি। যখন আপনি একটি নতুন কিছু সন্ধান করেন এবং এমন এই দক্ষতাটি আপনাকে সাহায্য করে। নেটওয়ার্কিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে। চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে এটি আপনাকে অনুসন্ধান করতে সহায়তা করতে পারে। নেটওয়ার্কিং এই ‘লুকানো’ সুযোগগুলি খুঁজে পাওয়ার কার্যকর উপায়।
নেটওয়ার্কিং এর মধ্যে পূর্ববর্তী সহকর্মী, গ্রাহক, প্রতিযোগী এবং সরবরাহকারীদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার উপায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই মুহুর্তে, যতটা ভার্চুয়াল ইভেন্টে উপস্থিত হবেন, তবেই আপনার নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি পাবে।
১. নেটওয়ার্কিং এর জন্য সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করুন
আপনি যে লোকদের সাথে কাজ করেছেন, পুরানো কর্তারা, গ্রাহক, সরবরাহকারী, সহযোগী এবং অন্যান্য লোকেদের সম্পর্কে চিন্তা করুন। একটি তালিকা তৈরি করুন এবং তারপরে পরিচিতিগুলি র্যাঙ্ক করুন। তারপর ভাবুন যে এগুলি আপনার কাছে কতটা মূল্যবান হবে এবং আপনি তাদের কাছে যাওয়ার জন্য কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এটি আপনাকে নেটওয়ার্কিংয়ের দোলগুলিতে যেতে সহায়তা করবে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। আপনি যাদের সাথে যোগাযোগ করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করুন।
কেমন হবে করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার?
২. নেটওয়ার্কিং এর জন্য প্লান রেডি করুন
আপনি কি পরিচিতি কাউকে খুঁজছেন? তারা কি আপনার সিভিতে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে বা জনবল নিচ্ছে এমন কাউকে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে? তারা কি এমন কোনও সংস্থার পরামর্শ দিতে পারে যা নতুন প্রতিভা সন্ধান করতে পারে? উনারা কি আপনাকে কোনও নির্দিষ্ট খাত সম্পর্কে পরামর্শ বা তথ্য দিতে পারে? এসব চিন্তাভাবনা করেই নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি করুন।
৩. নেটওয়ার্কিং পিচ তৈরী করুন
আপনি যখন নেটওয়ার্কিং করছেন, আপনি সম্ভবত তাদের সাথে খুব অল্প সময় পাবেন। আপনি যদি কোনও ইভেন্টে কারও সাথে সাক্ষাত করেন তবে আপনার কাছে কেবল কয়েক মিনিট সময় থাকতে পারে। এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ আপনি নিজেকে সংক্ষিপ্ত এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে বর্ণনা করতে পারবেন। কারো কাছে নিজেকে বর্ননা করার জন্য মাত্র 20-30 সেকেন্ড সময় নেওয়া উচিত। ‘আমি সংস্থাগুলিকে বিক্রয় ও মুনাফা বাড়াতে সহায়তা করি’ বলার চেয়ে এইটা বললে অনেক বেশি ভাগবে যে ‘আমি একটি ব্যবসায়িক উন্নয়ন ব্যবস্থাপক’।
৪. বিনিময়ে কৌসুলি হোন
নেটওয়ার্কিংয়ের এটি একটি উত্তম নিয়ম। অনেক লোকেই আপনাত সাথে তাদের ধ্যান ধারনা, বিভিন্নধরনের আইডিয়া শেয়ার করার জন্য যোগাযোগ করবে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সাথে আপনার বিনিয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা উচিৎ হবে এবং পরামর্শ শেয়ার করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হতে হবে। আপনি যদি প্রতিদান দিতে রাজি না হন তবে আপনাকেও কেউ সহায়তা করতে ইচ্ছাপোষণ করবে না।
৫. নিজের আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরি করুন
প্রাসঙ্গিক লোকের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রাসঙ্গিক গ্রুপগুলিতে যোগদান করুন এবং আলোচনায় অবদান রাখুন। আপনার লিঙ্কডইন প্রোফাইলটি আপনার সিভির সাথে মেলে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ, কারন লিঙ্কডইন প্রোফাইল আপনার নতুন চাকরী পেতে সহায়তা করবে৷
কিভাবে কোথায় চাকরি খুঁজবেন সেটা অনেক সময়ই বেশ ঝামেলার মনে হতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি জব মার্কেট বা চাকরির বাজার থেকে বেশ কিছু সময় ধরে বাইরে থাকেন তাহলে সেটি আরো বেশি কঠিন মনে হতে পারে।
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার কতটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ?
এক্ষেত্রে যে বিষয়টি কাজ করতে পারে সেটি হচ্ছে, প্রথমেই নিজের একটি আকর্ষণীয় অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করুন। যাতে করে একদিকে আপনার জন্য যেমন চাকরির আবেদন করা সহজ হবে ঠিক তেমনি অন্যদিকে নিয়োগকর্তারাও আপনাকে সহজে খুঁজে পাবে।
এই প্রোফাইল তৈরি করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনার মূল দক্ষতার জায়গাগুলো হাইলাইট করতে হবে।
সিভি বা বায়োডাটা অথবা জীবন বৃত্তান্ত বানানোর সময় আপনার দক্ষতাগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। অভিজ্ঞতাগুলোকে এর পর স্থান দিন। যেমন, আপনি সিভিতে বলতে পারেন যে, কোন কোন প্রজেক্ট আপনি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং বাজেটের মধ্যে করতে পেরেছেন। আপনি আগের কোম্পানিকে কিভাবে কতগুলো নতুন ক্লায়েন্ট জোগাড় করে দিয়েছেন সেগুলো বর্ণনা করুন।
৬. কোথায় চাকরি খুঁজবেন?
বিভিন্ন জব সাইটে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়া থাকে। আবার অনেক কোম্পানি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিজেদের ওয়েবসাইট বা পোর্টালে দিয়ে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
কোন নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে চাইলে খবর নিন যে সেখানে নিয়োগ হচ্ছে কিনা। আপনি যদি কোন একটি নির্দিষ্ট পদে চাকরি করতে চান তাহলে নিজে উদ্যোগী হন, ওই পদে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চেষ্টা করুন যে তারা কিভাবে সেটি পেয়েছেন।
প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো এক্ষেত্রে কাজে দিতে পারে। যেমন ধরুন লিংকডইন, ফেসবুক গ্রুপ, শিল্প কিংবা কমিউনিটি সংস্থা ইত্যাদি। এসব জায়গায় বিভিন্ন চাকরির খোঁজ যেমন থাকে ঠিক তেমনি কিভাবে আপনি সেটি অর্জন করবেন তার নির্দেশনাও থাকে।
সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকুন
প্রতিটি কাজের সন্ধান করতে সময় এবং শক্তি লাগে। এক্ষেত্রে সব সময় আত্মবিশ্বাসের সাথে চাকরী খুজতে হবে, কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। বার বার ব্যর্থ হলে লোকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, এদিক থেকে আপনাকে ব্যতিক্রমী হতে হবে। সকল পরিবেশেই নিজেকে স্থিতিস্থাপক রাখতে চেষ্টা কর্যন। কিছু উপায় আছে যা আপনার স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে এবং আপনার অনুসন্ধানকে ট্র্যাক রাখতে সহায়তা করতে পারেন।
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার
১. রুটিন মাফিক নিয়ম মেনে চলুন
আমাদের প্রত্যেকের একটা লাইফ সাইকেল আছে, সবাই একটা ফিক্স রুটিন দ্বারা পরিচালিত, প্রত্যেকের ই লেখাপড়া আছে, পাশাপাশি কমবেশি সবার ই জব থাকে। এক্ষেত্রে নতুন চাকরী খুজতে মনোযোগ হারানো যাবে না। প্রতিদিন একই সময়ে উঠুন, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রিয়াকলাপ নির্ধারণ করুন, উদাহরণস্বরূপ এক ঘন্টা প্রাসঙ্গিক চাকরির সন্ধান, দুই ঘন্টা নেটওয়ার্কিং এবং যাদের সাথে যোগাযোগ করত্র চান যোগাযোগ করুন। আপনি যে কাজই সেট করেন না কেন, এটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করুন এটি আপনাকে আরও সফল হতে সহায়তা করবে এবং আপনাকে আপনার লক্ষ্যের কেন্দ্রে পৌঁছে দিবে।
২. ক্যারিয়ার রিলেটেড প্রোগামে সম্পৃক্ত থাকুন
আপনি কাজ করছেন না, তারমানে এই না যে আপনি আপনার পেশা থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। সর্বশেষতম খবর এবং ঘটনার সাথে আপ টু ডেট রাখুন, এটি আপনাকে কেবল সংযুক্ত রাখবে না তবে আপনাকে প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং কোনও সাক্ষাতকারে সহায়তা করবে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে বাইরের পরিবেশের সাথে এনগেজড থাকুন।
৩. মাল্টি-টাস্কিং হতে চেষ্টা করুন
এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন-এর উপ-পরিচালক রওশন আলী বুলবুল বলেন, বর্তমান চাকরির বাজারে একজন চাকরি-প্রার্থীকে অন্য প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলে তাকে অবশ্যই মাল্টি-টাস্কিং হতে হবে।
আগে যেমন যে পদের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শুধু সেই পদের দায়িত্ব এবং যোগ্যতা থাকলেই তাকে নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা বদলে গেছে। এখন সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্যতা ছাড়াও আইটি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা থাকাটা খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
৪. স্বাস্থ্য সচেতন হোন
নিয়মিত ভালো খাওয়া এবং অনুশীলন করা শরীরের পাশাপাশি মস্তিস্কের পক্ষেও ভাল। সারাদিন শুধু জব খোজাখুজিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেই হবে না, নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। তা না হলে খেই হারিয়ে ফেলবেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া জরুরি।
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার
৫. সর্বদা ইতিবাচক থাকুন
এটি বলা অনেকাংশে সহজ তবে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। আমাদের মস্তিষ্কগু সবচেয়ে খারাপ চিন্তা করতে এবং খারাপের দিকে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে। ‘আমি কোনোভাবেই হোক চাকরি পাব না’ এই মনোভাব নিয়ে যদি আপনি কোনও সাক্ষাতকার বা আবেদন প্রক্রিয়াতে যান তবে এটি কোনও উপকারে আসবে না। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে যাচ্ছি যেমন, ‘আমার কাছে সমস্ত অভিজ্ঞতা নাও থাকতে পারে তবে আমি সত্যিই আমার দক্ষতাকে ফিট মনে করি’ বা ‘আমিই এটি করতে পারি’ এই মনোভাব রাখুন। তবেই সব অনুকূলে চলে আসবে।
৬. নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন
যাদের চাকরি চলে গেছে তাদের নতুন চাকরি পেতে সমস্যাই হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নতুন দক্ষতা বাড়ানোর সাথে সাথে নিজে নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুন কোন প্রতিষ্ঠান বা সেক্টরে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “করোনার পর বর্তমানে অনলাইনে কাজের সুযোগ বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। স্বপ্ন, আগোরা, মিনাবাজার, ফুডপাণ্ডার মতো প্রতিষ্ঠানে লোক লাগছে। তো নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে এ ধরণের অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজের মানসিকতা থাকতে হবে।”
করোনা পরবর্তী চাকরির বাজার
৭. কোন কাজকে ছোট মনে না করে শুরু করতে হবে
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাকরি লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হচ্ছে ধৈর্য্য ধরতে হবে। সব কিছু একদিনে বা চাইলেই হয়ে যাবে না সেটি মাথায় রাখতে হবে।
আমি কত টাকা বেতন পাচ্ছি বা আমার পদটা কি সেটা দিয়ে কোন কাজের মূল্যায়ন হয় না। আমি কতটা ভ্যালু অ্যাড করছি বা নতুন কাজের কতটুকু শিখতে পারছি সেটাই বড় ব্যাপার।
৮. সব সময় বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিহার করুন
কাজের সন্ধানের ক্ষেত্রে সবসময় সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার পরিমাণ বেশি। এক্ষেত্রে সর্বদা নতুন আবেদন করার সময় বাস্তববাদী হোন, আপনি যত বেশি চাকরির জন্য আবেদন করবেন, এর অর্থ হলো আপনি ততো বেশি প্রত্যাক্ষিত হবেন। তবে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে আপনি যে কাজের জন্য নিজেকে ফিট বলে মনে করেন কেবল সেই সকল কাজের জন্যই আবেদন করুন। সেক্ষেত্রে আপনার সফলতার হার বেড়ে যাবে। অন্যথায় আপনি কেবল নিজের সময় নষ্ট করছেন এবং আপনি প্রাপ্ত প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মনে রাখবেন কাজের সন্ধান করা ব্যবসা, এটি ব্যক্তিগত নয়। যদি আপনাকে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা না হয়, তবে এই না যে তারা আপনাকে পছন্দ করেন না। হতে পারে আপনি এই জবের জন্য উপযুক্ত ছিলেন না। যতটা সম্ভব নিজেকে নতুনরুপে তৈরী করুন এবং পরবর্তী সুযোগের সন্ধান করুন। তাই সব সময় মনে রাখবেন যে আপনি সবসময় জয়ী হবেন না।
বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group