শত অভিযোগের পরও ইভ্যালিতে একদিনে ২০০ কোটি টাকার অর্ডার । ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য দিতে গড়িমসিসহ নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও একদিনে ২০০ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছে ইভ্যালি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শনিবার (১০ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, একটা ধারণা ছিল যে, সবাই ইভ্যালিতে উচ্চ মূল্যছাড়ের জন্য কেনাকাটা করে। কিন্তু আসল প্রেক্ষাপট যে ভিন্ন সেটি এখন স্পষ্ট।
আরো পড়ুন, ইভ্যালির ৩৩৯ কোটি টাকার অনুসন্ধানে দুদক

টি১০ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের বড় একটি লয়্যাল কাস্টমার বেইজ রয়েছে। তারা মূল্যছাড় খুব কম হলেও ক্যাম্পেইনের মাত্র ৩ ঘণ্টার কম সময়ে ৬০ হাজারের বেশি অর্ডার প্লেস করে। যার আর্থিক মূল্যমান ২০০ কোটি টাকার বেশি।
অবশ্য পরিশোধিত অর্ডারের মূল্যমান এর থেকে কম হবে। তবুও এই পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আরও আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিলাম, একটি লাভজনক ও টেকসই ই-কমার্স ইকোসিস্টেমের প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইভ্যালি।
এর আগে ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা থাকার তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।
এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।
ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এরপর দুদকের পক্ষ থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) কমিশন থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার পর শুক্রবার (৯ জুলাই) পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে এ চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয় আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে আদালত থেকে এ বিষয়ে অনুমতি নেওয়া হবে।
দুদকের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মো. রাসেল বিষয়টি ‘পজিটিভলি দেখছি’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি আমার বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পজিটিভলি দেখছি।
বাংলাদেশের সব বড় কোম্পানির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। হয়তো আমাকে ভালোবাসার জন্য ওনাদের ভয়ের বিষয়টা আমাকে বলতেন না। আমরা বিজনেস করেছি সবার সঙ্গে। এখন ওনারা আরও বেশি কনফিডেন্স পাবেন।’
এখন আমরা অনেকটাই প্রফিটে বিজনেস শুরু করেছি। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকদের টাকা আমাদের হাতে আসার সুযোগ নেই। এছাড়া তদন্ত করলেই সবাই দেখবেন পুরাতন অর্ডার কী পরিমাণ ডেইলি যাচ্ছে।
ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিজনেস ডেভেলপমেন্টে লস হয়েছে, সেটা বিজনেস করেই প্রফিট করে ফেলব, এর চেয়ে কম সময়ে। কারণ আমাদের ক্রয় মূল্য বাজার মূল্য থেকে অনেক কম। সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য।’
ইভ্যালির গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করব যে, আমাদের তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে কেউ কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলবেন না। আপনাদের রেগুলার কেনাকাটা ইভ্যালিতে করুন। এতে ইভ্যালির লসের যৌক্তিকতা আসবে।’
মো. রাসেলের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইভ্যালি তার গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসাবে নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশনের নির্দেশক্রমে দুদকের অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং প্রয়ােজনীয় রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করেছে।
অনুসন্ধানে টিম জানতে পেরেছে তারা গােপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তাই অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযােগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞায় প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর সদস্য হলেন উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম।
দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা।
ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা।
গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।
বৃত্তি, শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ সকল খবর সবার আগে পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
Join Our Official Facebook Group
অন্যরা যা পড়েছে,
- ইবনে সিনা ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি সার্কুলার ২০২৩
- Al Arafah Islami Bank Scholarship Result 2022 (PDF Download)
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি সার্কুলার ২০২২
- ঢাকা জেলাপরিষদ শিক্ষাবৃত্তির সার্কুলার প্রকাশিত
- ইমদাদ সিতারা খান এইচএসসি শিক্ষাবৃত্তি সার্কুলার -২০২৩